বাইক চুরি রোধে করনীও:
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে কিছুটা হলেও বাইক চুরি প্রতিরোধ করা সম্ভবঃ
১। বাইকে অবশ্যই ডিস্ক লক ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে ভাল কোম্পানির ডিস্ক লক ব্যবহার করা অনেক জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় চোর বাইক স্টার্ট করে জোরে টান দিলে এমনিতেই ডিস্ক লক ভেঙ্গে যায়। এক্ষেত্রে বড়সড় টাইপের লক ব্যবহার করা ভাল। মোবাজ কোম্পানির তালাটা বেশ ভাল সেফটি দেয়।
২। ভুলেও নির্জন জায়গায় বাইক রেখে যাবেন না। এক্ষেত্রে আপনি বাইকে যতই লক লাগাননা কেন কাজে দিবে না। আমি অনেক বার দেখেছি চোর এসে বাইকের মালিক বলে দাবী করে এবং চাবি হারিয়েছে এই বলে ভ্যানে উঠিয়ে বাইক নিয়ে যায়। এসময় আসে পাশের সাধারণ জনগণও বাইক ভ্যানে তুলতে সাহায্য করে।
৩। সিকিউরিটি এলার্ম বাইক চুরি রোধে অনেক সহায়তা করে। তাই চেষ্টা করবেন অনেকদূর পর্যন্ত রেঞ্জ কাজ করে এমন একটি ভাল কোম্পানির সিকিউরিটি এলার্ম বাইকে লাগাতে।
৪। বাইকে ইঞ্জিন ইমোবিলাইজার সেন্সর সিস্টেম লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে চোর বাইক কোনভাবে চাবি দিয়ে অন করে ফেললেও স্টার্ট করতে পারবে না।
৫। বাইকের ইঞ্জিনের সাথে কানেকশন দিয়ে ইঞ্জিন কিল সুইচ লাগাতে পারেন এবং তা অবশ্যই গোপন যায়গায় লুকিয়ে রাখবেন যেন আপনি ছাড়া আর কেউ না জানে। এক্ষেত্রে যত ছোট সুইচ ব্যবহার করবেন তত ভাল।
৬। বাইকে ভাল কোন কোম্পানির জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে পারেন। ebay.com এ ভাল কিছু ট্র্যাকার পাওয়া যায় যা ১০০% সঠিক লোকেশন শো করে। প্রয়োজনে বাইক কোন যায়গায় রেখে যাবার পর আগে চেক করে দেখবেন জিপিএস ট্র্যাকার এক্স্যাক্ট লোকেশন শো করছে কিনা।
৭। বাইকে সিকিউরিটি এলার্ম এবং জিপিএস ট্র্যাকার কখনোই পাশাপাশি রাখবেন না। জিপিএস ট্র্যাকার টা যতটুকু সম্ভব লুকানো থাকে এমন যায়গায় লাগানোর চেষ্টা করবেন।
৮। বাইক রেখে কোথাও যেতে হলে অবশ্যই লোকজনের সমাগম বেশি এমন যায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন। সবচাইতে ভাল হয় যদি কোন ব্যাংক বা এটিএম বুথের সামনে বাইক রেখে যেতে পারেন কারণ এগুলোর সামনে সবসময় সিকিউরিটি গার্ড থাকে। সিকিউরিটি গার্ডকে ১০-২০ টাকা বকশিস দিলেই ওরা খুব ভালো ভাবে আপনার বাইকের উপর নজর রাখবে। আশে পাশে কোন ব্যাংক বা এটিএম বুথ না থাকবে কোন দোকানের সামনে বাইক পার্ক করবেন এবং দোকানদারকে অনুরোধ করবেন আপনার বাইকের দিকে একটু নজর রাখতে।
৯। সম্ভব হলে বাইকে ভাল কোম্পানির গ্রিপ লক এবং চেইন স্পোকেটে একটা এক্সট্রা লক লাগাবেন। এই দুইটা জিনিস বেশ ভালই কাজ করে।
১০। বাইক কোন পার্কিং লটে রেখে যাওয়ার সময় বাইকে অবশ্যই একটা এক্সট্রা লক লাগিয়ে যাবেন। পার্কিং লট থেকে অহরহ বাইক চুরি হয় এবং তখন যত যাই করেন না কেন, সিকিউরিটি গার্ডরা আপনার বাইক দিতে পারবে না।
১১। বাইক রেখে রেস্টুরেন্ট গেলে আপনি রেস্টুরেন্টে বসে দেখতে পান এমন কোন যায়গায় বাইক রাখবেন।
১২। বাইকের তেলের চাবিতে এক্সট্রা একটা লক লাগাতে পারেন। বাইকের পার্টস বিক্রি করে এমন দোকানে তেলের চাবির লক পাওয়া যায়।
১৩। আপনার বাইকে নিজের পছন্দমত ইউনিক ডিজাইন করতে পারেন যাতে তা খুব সহজেই অন্য বাইক থেকে আলাদা করা যায়। এটা বেশ কাজে দেয়। আমার নিজের বাইকে আমার পছন্দমত গ্রাফিক্স ডিজাইন বা এয়ার ব্রাশ পেইন্ট জব করা ছিল যার ফলে চুরির হবার প্রায় ছয় মাস পড়েও আমার বাইক পুনরায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।
১৪। যতটুকু সম্ভব চেস্টা করবেন বাইকের চাবি অন্য কাউকে না দিতে কারণ বাইকের চাবির ছাপ রেখে পরবর্তীতে সেই ছাপ থেকে চাবি বানানো দুই সেকেন্ডের কাজ। যদি একান্তই বাইকের চাবি দিতে হয় তবে এক্সট্রা যেসব লক আপনার বাইকে ব্যবহার করা হয় সেগুলোর চাবি দিবেন না এবং কোনভাবেই বাইকের গোপন ইঞ্জিন লকের সুইচ কোথায় লাগিয়েছেন তা দেখাবেন না।
১৫। হাইওয়েতে রাইড করার সময় অপরিচিত রাস্তায় রাতের বেলা রাইড করবেন না। একান্তই রাইড করতে হলে অবশ্যই সাথে একজন কো-রাইডার রাখবেন অথবা কোন গ্রুপের সাথে রাইড করবেন।
১৬। রাতের বেলা রাইড করার জন্য বাইকে যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। এক্ষেত্রে ভাল কোম্পানির ফগ লাইট লাগাতে পারেন তবে লাইট লাগানোর সময় লাইটের পজিশনের দিকে খেয়াল রাখবেন যেন আপনার লাইট অপর দিকের চালকের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে।
১৭। রাস্তায় অপরিচিত কেউ দাড়াতে বললে দাড়াবেন না। অনেক সময় দেখা যায় বাইক ছিনতাই করার জন্য ছিনতাইকারীরা মহিলা এবং বাচ্চাদের ব্যবহার করে। কোন বাচ্চার হাতে যদি কাগজের টুকরায় কোন ঠিকানা লেখা দেখতে পান এবং তাকে যদি ওই ঠিকানায় পৌছে দিতে বলে তবে ভুলেও তা করবেন না। প্রয়োজনে আসে পাশে পুলিশ থাকলে তার সাহায্য নিন।
১৮। রাতের বেলা অপরিচিত কাউকে বাইকে লিফট দিবেন না বিশেষ করে কোন মহিলাকে ভুলেও লিফট দিতে যাবেন না। তাহলে বাইক এবং প্রাণ দুইটাই খোয়াতে পারেন।
১৯। বাইকের টায়ারে লিক প্রুফ জেল ব্যবহার করুন। অনেক সময় বাইক ছিনতাই করার জন্য ছিনতাইকারীরা রাস্তায় পেরেক বিছিয়ে রাখে।
২০। বাইক রাইড করার সময় ভাল কোন কোম্পানির ফুল ফেস হেলমেট ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে দুরের ভ্রমণে বডি আর্মোর ব্যবহার করুন। অনেক সময় বাইক ছিনতাই করার জন্য রাইডারকে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। এক্ষেত্রে বাইক না থামিয়ে স্পিড বাড়িয়ে সেই জায়গা ত্যাগ করুন।
২১। রাতের বেলা বাইক চুরির একটা মহা কৌশল হল লুকিয়ে থেকে বাইকের গায়ে কিছু ছুড়ে মারা। এক্ষেত্রে বাইকের কি হয়েছে তা দেখার জন্য রাইডার বাইক থামায় এবংতখন ছিনতাইকারীরা বাইক ছিনতাই করে।
২২। নির্জন জায়গায় বাইক চলন্ত অবস্থায় জোরে কোন শব্দ হলে ভুলেও কি হয়েছে তা দেখার জন্য থামবেন না এবং চেষ্টা করবেন মানুষজন আছে এমন কোন জায়গায় থেমে বাইকের কি হয়েছে তা চেক করতে।
২৩। রাতের বেলা ভ্রমণ করার সময় পথিমধ্যে বাজার গুলোতে না থামার চেষ্টা করবেন। কারণ এতে আপনি বাইক ছিনতাইয়ের সহজ টার্গেটে পরিনত হতে পারেন।
২৪। রাতের বেলা একান্তই একা রাইড করতে হলে কোন হাইওয়ে বাসকে ফলো করে তার পেছন পেছন যাবার চেষ্টা করবেন।
২৫। কোন যায়গায় ভ্রমণ করতে যাবার সময় ইন্টারনেট থেকে আশে পাশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম্বার যোগার করে তা সাথে রাখবেন। এক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ এবং টুরিস্ট পুলিশ বেশ হেল্পফুল।
২৬। বাইকে অবশ্যই লুকিং গ্লাস ব্যবহার করবেন এবং পেছনে কোন গাড়ি আপনাকে ফলো করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যদি বুঝতে পারেন আপনাকে কেউ ফলো করছে তবে নিরাপদ কোন যায়গায় আশ্রয় নিন।
২৭। নির্জন কোন যায়গায় কোন এক্সিডেন্ট হয়েছে দেখলে সেখানে বাইক থামাবেন না। আজকাল এটাও একটা ফাদ।
২৮। আপনার বাসার পার্কিংএ প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারেন।
২৯। রাতের বেলা বাইকে রাইড করার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল আছে কিনা তা আগে থেকেই চেক করে নিবেন। তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বাইক রাস্তায় থেমে গেলে অনেক সময় ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা থাকে।
৩০। প্রয়োজনীয় সব টুল কিট বাইকের সাথেই রাখুন। রাস্তায় বাইক বাইক নষ্ট হয়ে গেলে না ঘাবড়িয়ে গিয়ে আগে বাইক সেইফ কোন যায়গায় পার্ক করুন।
৩১। অপরিচিত যায়গায় আপনার বাইকের সাথে কোন যানবাহনের হাল্কা ধাক্কা বা সংঘর্ষ হলে কথা না বাড়িয়ে সেই যায়গা থেকে কেটে পড়ুন। অনেক সময় ছিনতাইকারীরা ইচ্ছে করে আপনার সাথে ঝামেলা বাধাবে বাইক চুরি করার জন্য।
৩২। বাইকে ছোটখাট পার্টস যেমন ক্লাচ কেবলের তার, এক্সিলারেটর কেবলের তার, এক্সট্রা প্লাগ সবসময় সাথে রাখুন।
৩৩। টেস্ট রাইড দেবার জন্য কখনই অপরিচিত বা অল্প পরিচিত কাউবে বাইক দিবেন না। কয়েকদিন আগে টেষ্ট রাইড দেবার কথা বলে হাতিরঝিল থেকে এক ভাইয়ের বাইক চুরি করা হয়েছে।
৩৪। ভ্রমণের পথিমধ্যে অপরিচিত কারো দেয়া কিছু খাবেন না। যে কোন ব্যাপারে মনের মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহের সৃষ্টি হলেই সে ব্যাপারে সাবধান হয়ে যান।
৩৫। রাতের বেলা হাইওয়েতে বাইক রাইডিং এর সময় বডি আর্মর, নি-গার্ড, হ্যান্ড গ্লাভস এবং ভাল কোম্পানির একটি হেলমেট ব্যবহার করুন। এতে আপনার বাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ছিনতাইকারী আপনাকে শারীরিকভাবে আহত করার চেষ্টা করলেও এই সব এক্সেসরিসের কারণে আপনি বেচে যেতে পারেন।
সর্বশেষে বলব কখনো যদি আঁটসাঁটভাবে ছিনতাইকারীর কবলে পরেন এবং তাদের কাছে যদি অস্ত্র থাকে তবে আপনার প্রাণের ঝুঁকি না নিয়ে বাইক তাদেরকে দিয়ে দিন। কারণ বাইকের চাইতে প্রাণের মুল্য অনেক বেশি এবং বেঁচে থাকলে আবারো বাইক কিনতে পারবেন। বাইক চুরি গেলে সাথে সাথে থানায় জিডি করুন।
No comments:
Post a Comment