গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লি দিনের বেলায় আশপাশের আর সব গ্রামের মতোই। তবে রাতে আলাদা। গত সোমবার রাতে সাহেবগঞ্জ খামারের উত্তর পাশ দিয়ে পল্লির মাদারপুর গ্রামে ঢুকতেই মনে হলো, সরব আলোকিত পরিবেশ থেকে হঠাৎ যেন নীরব জমাট অন্ধকারে চলে আসা। কারণ, গ্রামটিতে এখনো বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি।
একই অবস্থা সাঁওতালপল্লির অপর দুই গ্রাম বড় জয়পুর ও ছোট জয়পুরের। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের এ তিন গ্রামের একটিই রাস্তা। কাঁচা ও সরু ওই রাস্তাও এবড়োখেবড়ো, খানাখন্দে ভরা। নেই কোনো বিদ্যালয় বা অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। সাঁওতালপল্লির রাতের পরিবেশ যেন অনেকটা ভারতের সঙ্গে বিনিময়ের আগে আমাদের দেশের ভেতরের ছিটমহলগুলোর মতো।
স্থানীয় গির্জার তালিকা অনুসারে মাদারপুরে ৪৪০, বড় জয়পুরে ৫৫০ ও ছোট জয়পুরে ২৫০ এই মোট ১ হাজার ২৪০ সাঁওতাল পরিবারের বসবাস। পল্লির উত্তরে খামারবাড়ি, দক্ষিণে বাগদা বাজার ও পূর্বে সাহেবগঞ্জ খামার—এই তিন পাশেই বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু মাঝখানে এই তিন গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি।
সোমবার রাত আটটার দিকে বেহাল রাস্তা ধরে জয়পুর মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে পল্লির মেটে চুলার আলো দেখা গেল। সেখানে কিছু নারী-পুরুষ রান্না করছিলেন। চারদিকে জমাট অন্ধকার।
শিক্ষা ও আর্থিক সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা সাঁওতালদের মধ্যে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার নেই। গ্রামের কয়েকজন বললেন, তাঁদের আলোর কাজ চলে কেরোসিনের কুপি, হারিকেন আর প্রধানত গ্যাস লাইটারে যুক্ত সরু টর্চে। মুঠোফোন আছে কারও কারও। তবে তাঁরা মুঠোফোনের টর্চের আলো ব্যবহার করতে চান না দ্রুত চার্জ চলে যায় বলে। কারণ, মুঠোফোনে চার্জ দিতে হয় সাহেবগঞ্জ বা কাটাবাড়ি বাজারে কোনো দোকানে গিয়ে বলে-কয়ে।
প্রতারণার অভিযোগ: সাঁওতালপল্লির অনেকে অভিযোগ করলেন, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার আশায় ২০১৪ সালে প্রায় ১০০ পরিবার ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন সাপমারা ইউনিয়নেরই রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তির কাছে। মাদারপুরের রসেন মাড্ডি ১ হাজার ২০০ টাকা, মন্তু মাড্ডি ১ হাজার ৩০০ টাকা, বাসন্তী হেমব্রন ও কবিতা হেমব্রন দেড় হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বললেন। তাঁরা বললেন, তবে তাঁদের রসিদ দেওয়া হয়নি। এখনো বিদ্যুৎ আসেনি।
সাঁওতালরা বললেন, রুহুল আমিন পাশের কাটাবাড়ি ইউনিয়নের ভেলারায় বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয়ের যোগাযোগ আছে। আজ হবে, কাল হবে করে তিনি প্রায় দুই বছর পার করেছেন।
জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, সাঁওতালরা তাঁকে শিক্ষক বললেও তিনি ওই স্কুলের অফিস সহকারী। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য চেষ্টা করেছেন। দরপত্র হয়ে গেছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করলে শিগগিরই বিদ্যুৎ যাবে। বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগের কথা বললে তিনি তা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে অন্তত ১০ জন সাঁওতালের অভিযোগ ভিডিওতে রেকর্ড করা আছে জানালে তিনি বললেন, সাঁওতালরা তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তিনি টাকা নেননি। সাহেবগঞ্জ খামারে তাঁর একটি সেচ পাম্প ছিল। এ কারণে পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। দরপত্রের কথা কীভাবে জানলেন—এ প্রশ্নে বলেন, লোকমুখে শুনেছেন।
সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রুহুল আমিন বিদ্যুতের কথা বলে অনেক সাঁওতালের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। দালালেরা অনেক সময় লোকদের প্রতারিত করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, সাধারণত এক বছর আগে পরিকল্পনা করা হয় কোন গ্রামে পরের বছর বিদ্যুৎ যাবে। ওপরের দিক থেকে এই পরিকল্পনা আসে। সাঁওতালপল্লির ওই তিন গ্রামে বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা আসেনি। কাজেই সেখানে দরপত্রের প্রশ্নই আসে না। তবে উচ্চপর্যায় থেকে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ভেতরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনার একটি বড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সাল নাগাদ সাঁওতালপল্লিতে বিদ্যুৎ যাবে।
বিদ্যালয় নেই: সাঁওতালদের তিন গ্রামে একমাত্র বিদ্যালয় ছিল জয়পুর মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটিও অনেক বছর বন্ধ। সাঁওতালপল্লির শিশুরা পড়ে সাহেবগঞ্জ খামারের ভেতরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁচা কৃষ্ণপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও বুজরুক বেড়া আর্জি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত ৬ নভেম্বরের উচ্ছেদের পর গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক পর এসব স্কুলের প্রধান শিক্ষক পল্লিতে এসে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভয় দিয়ে শিশুদের স্কুলে নিয়ে গেছেন। অভিভাবকেরা বলেন, খামার কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলায় শিক্ষার্থীদের এখন বিদ্যালয়ে যেতে হয় অনেক
একই অবস্থা সাঁওতালপল্লির অপর দুই গ্রাম বড় জয়পুর ও ছোট জয়পুরের। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের এ তিন গ্রামের একটিই রাস্তা। কাঁচা ও সরু ওই রাস্তাও এবড়োখেবড়ো, খানাখন্দে ভরা। নেই কোনো বিদ্যালয় বা অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। সাঁওতালপল্লির রাতের পরিবেশ যেন অনেকটা ভারতের সঙ্গে বিনিময়ের আগে আমাদের দেশের ভেতরের ছিটমহলগুলোর মতো।
স্থানীয় গির্জার তালিকা অনুসারে মাদারপুরে ৪৪০, বড় জয়পুরে ৫৫০ ও ছোট জয়পুরে ২৫০ এই মোট ১ হাজার ২৪০ সাঁওতাল পরিবারের বসবাস। পল্লির উত্তরে খামারবাড়ি, দক্ষিণে বাগদা বাজার ও পূর্বে সাহেবগঞ্জ খামার—এই তিন পাশেই বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু মাঝখানে এই তিন গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি।
সোমবার রাত আটটার দিকে বেহাল রাস্তা ধরে জয়পুর মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে পল্লির মেটে চুলার আলো দেখা গেল। সেখানে কিছু নারী-পুরুষ রান্না করছিলেন। চারদিকে জমাট অন্ধকার।
শিক্ষা ও আর্থিক সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা সাঁওতালদের মধ্যে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার নেই। গ্রামের কয়েকজন বললেন, তাঁদের আলোর কাজ চলে কেরোসিনের কুপি, হারিকেন আর প্রধানত গ্যাস লাইটারে যুক্ত সরু টর্চে। মুঠোফোন আছে কারও কারও। তবে তাঁরা মুঠোফোনের টর্চের আলো ব্যবহার করতে চান না দ্রুত চার্জ চলে যায় বলে। কারণ, মুঠোফোনে চার্জ দিতে হয় সাহেবগঞ্জ বা কাটাবাড়ি বাজারে কোনো দোকানে গিয়ে বলে-কয়ে।
প্রতারণার অভিযোগ: সাঁওতালপল্লির অনেকে অভিযোগ করলেন, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার আশায় ২০১৪ সালে প্রায় ১০০ পরিবার ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন সাপমারা ইউনিয়নেরই রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তির কাছে। মাদারপুরের রসেন মাড্ডি ১ হাজার ২০০ টাকা, মন্তু মাড্ডি ১ হাজার ৩০০ টাকা, বাসন্তী হেমব্রন ও কবিতা হেমব্রন দেড় হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বললেন। তাঁরা বললেন, তবে তাঁদের রসিদ দেওয়া হয়নি। এখনো বিদ্যুৎ আসেনি।
সাঁওতালরা বললেন, রুহুল আমিন পাশের কাটাবাড়ি ইউনিয়নের ভেলারায় বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয়ের যোগাযোগ আছে। আজ হবে, কাল হবে করে তিনি প্রায় দুই বছর পার করেছেন।
জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, সাঁওতালরা তাঁকে শিক্ষক বললেও তিনি ওই স্কুলের অফিস সহকারী। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য চেষ্টা করেছেন। দরপত্র হয়ে গেছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করলে শিগগিরই বিদ্যুৎ যাবে। বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগের কথা বললে তিনি তা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে অন্তত ১০ জন সাঁওতালের অভিযোগ ভিডিওতে রেকর্ড করা আছে জানালে তিনি বললেন, সাঁওতালরা তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তিনি টাকা নেননি। সাহেবগঞ্জ খামারে তাঁর একটি সেচ পাম্প ছিল। এ কারণে পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। দরপত্রের কথা কীভাবে জানলেন—এ প্রশ্নে বলেন, লোকমুখে শুনেছেন।
সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রুহুল আমিন বিদ্যুতের কথা বলে অনেক সাঁওতালের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। দালালেরা অনেক সময় লোকদের প্রতারিত করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, সাধারণত এক বছর আগে পরিকল্পনা করা হয় কোন গ্রামে পরের বছর বিদ্যুৎ যাবে। ওপরের দিক থেকে এই পরিকল্পনা আসে। সাঁওতালপল্লির ওই তিন গ্রামে বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা আসেনি। কাজেই সেখানে দরপত্রের প্রশ্নই আসে না। তবে উচ্চপর্যায় থেকে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ভেতরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনার একটি বড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সাল নাগাদ সাঁওতালপল্লিতে বিদ্যুৎ যাবে।
বিদ্যালয় নেই: সাঁওতালদের তিন গ্রামে একমাত্র বিদ্যালয় ছিল জয়পুর মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটিও অনেক বছর বন্ধ। সাঁওতালপল্লির শিশুরা পড়ে সাহেবগঞ্জ খামারের ভেতরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁচা কৃষ্ণপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও বুজরুক বেড়া আর্জি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত ৬ নভেম্বরের উচ্ছেদের পর গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক পর এসব স্কুলের প্রধান শিক্ষক পল্লিতে এসে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভয় দিয়ে শিশুদের স্কুলে নিয়ে গেছেন। অভিভাবকেরা বলেন, খামার কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলায় শিক্ষার্থীদের এখন বিদ্যালয়ে যেতে হয় অনেক
No comments:
Post a Comment