বিজ্ঞানের ক্রম-অগ্রগতির এ সময়টিকে বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির যুগ হিসেবে। বর্তমানে সামরিক বা পারমাণবিক শক্তি নয় তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা দ্বারাই নির্ধারিত হচ্ছে দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা। এক সময়ের সামরিক স্বার্থ ও অস্ত্র গবেষণার সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি এখন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ড্রইং রুম বা বাসগৃহে প্রবেশ করেছে। তথ্য-প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রার পটভূমিতে মহাজোট সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল বা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলনের একটি অন্যতম ক্ষেত্র বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ই-বুক প্রণয়ন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা, শিক্ষার্থী নিবন্ধীকরণ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজসমূহে ইন্টারনেটের সাহায্যে ভর্তির আবেদন ও ফলাফল জানা ইত্যাদি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আন্তরিক প্রয়াস। সম্প্রতি দেশের শত বছরের পুরাতন শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে সরকার ডিজিটাল ক্লাস রুম নামে এক অভিনব, আধুনিক, কার্যকর পদ্ধতি প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে গত ২০ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও ফনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ক্লাস রুম এবং একই সঙ্গে শিক্ষকদের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, এক বছরের মধ্যেই ২০ হাজার ৫০০ স্কুল ও মাদ্রাসায় অন্তত একটি শ্রেণীকক্ষে এই ডিজি ক্লাস রুম প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এ কাজে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ সকল সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ কর্মসূচীর উদ্দেশ্য কেবল তথ্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা নয়; বরং শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা।
প্রচলিত ধারায় শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে একটি কঠিন ও নিরস বিষয়। এ ধারায় পাঠ্যপুস্তকের বিষয়সমূহ শিক্ষকগণ শ্রেণীকক্ষে যেভাবে উপস্থাপন করেন তাতে শিক্ষার্থীরা পঠিত বিষয়ের প্রতি কিছুতেই আগ্রহী হয়ে উঠছে না। শিক্ষা-বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা যাচ্ছে না এবং বিষয়বস্তু ঠিক মতো বোধগম্যও হচ্ছে না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পঠিত বিষয়কে না বুঝেই আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে। ফলে প্রকৃত শিখনফল অর্জিত হচ্ছে না। পরীক্ষায় ফল ভালো করলেও কর্মজীবনে গিয়ে অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজিত এই সমস্যাকে দূর করার লক্ষ্যে ডিজি অর্থাৎ ডিজিটাল ক্লাসরুম একটি শুভ সূচনা। এতে শিক্ষা বিষয়টিকে শিক্ষার্থীর নিকট অনেক বেশি আনন্দময়, সহজবোধ্য করা যাবে। শিক্ষা হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন)-প্রকল্প কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম’ এর ধারণা শিক্ষাদান পদ্ধতিতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন। তাঁদের মতে, এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের শিক্ষার মানের একটি গুণগত রূপান্তর সংঘটিত হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে ‘শিক্ষকদের দ্বারা ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি’ এটুআই প্রকল্প কর্তৃক উদ্ভাবিত আরেকটি উল্লেখ করার মতো বিষয়। ডিজিটাল কনটেন্ট হলো পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত বিষয়কে শব্দে, ছবিতে ও গতিময়তায় উপস্থাপনের জন্য নির্মিত শিক্ষকদের তৈরি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ। শিক্ষকগণ আগে থেকেই কম্পিউটারে পাওয়ার পয়েন্ট প্রোগ্রামে বিভিন্ন ভিডিও, অডিও, ইফেক্ট, এনিমেশন ব্যবহার করে পাঠ্যপুস্তকের কনটেন্টকে সøাইডে রূপান্তরিত করবেন। পরে শ্রেণীকক্ষে সেটি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করবেন। এতে পাঠ্যপুস্তকের কালো অক্ষরে বর্ণিত ঘটনা বা বিষয় শিক্ষার্থীর কাছে শব্দে, চিত্রে, গতিময়তা, ভিডিও এবং এনিমেশনের মাধ্যমে সহজেই জীবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতে পারে। কনটেন্ট তৈরির জন্য এক জন শিক্ষকের কম্পিউটারের সাধারণ জ্ঞান, ইন্টারনেট থেকে ছবি, এনিমেশন বা ভিডিও ডাউনলোড করার কৌশল, তা পাওয়ারপয়েন্টে অন্তর্ভুক্ত করার দক্ষতা থাকলেই চলবে। শিক্ষকদের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট একটি বিশেষ ওয়েব সাইট এবং জাতীয় ই-তথ্যকোষে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকগণ এ সব সাইট থেকে ডিজিটাল কনটেন্ট সংগ্রহ করে এমনকি প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পাদনা করে শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারবেন। চাইলে শিক্ষার্থীরাও সেখান থেকে সাহায্য নিতে পারবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত, ব্যাকরণ এবং ইংরেজির মতো কঠিন বিষয়গুলো এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের নিকট আরও বোধগম্য এবং সহজ করে উপস্থাপন করা যায়। যেমন: মানুষের পরিপাকতন্ত্রের কাজ বোঝানোর সময় কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি এনিমেশন বা ভিডিও ক্লিপই যথেষ্ট। এটি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া সহজে সম্ভব। এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের বিষয়সমূহের উপস্থাপপনা সহজবোধ্য হওয়ায় বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব ও আগ্রহ সৃষ্টি হবে। শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ওঈঞ রহ ঊফঁপধঃরড়হ) ব্যবহারের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে। ব্যবহৃত হলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রেণীকার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার মানোন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হবে ক্লাসে নিত্যদিনের শিক্ষাপোকরণ। এর বাইরে একটি প্রজেক্টরের প্রয়োজন হবে মাত্র। সরকারের আশাবাদ বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি বা সংস্থা হাত বাড়ালে সারাদেশে সহজেই সরকারী-বেসরকারী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতি চালু করা সম্ভব। এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকার ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে দাবি করছে। সরকারি তথ্য মতে, গত ২০১০ সাল হতে এ বিষয়ে শিক্ষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯ হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করা হচ্ছে যেখানে শিক্ষকগণ নিজেরাই ডিজিটাল কনন্টেন্ট তৈরি করতে এবং শ্রেণীকক্ষে ব্যবহারে সক্ষম হবেন এবং একে অপরকে শিখাতে পারবেন।
ডিজিটাল ক্লাসরুম এবং কনটেন্টের ব্যবহার আমাদের দেশে নতুন হলেও উন্নত দেশগুলোতে এর প্রচলন আগেই হয়েছে। এখন বিশ্বজুড়ে বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণীকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন ও এ নিয়ে গবেষণা চলছে। আগের শিক্ষাপদ্ধতি ছিল শিক্ষককেন্দ্রিক এখন শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এর মূল কথা হলো শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা। যেখানে শিক্ষক কেবল ফেসিলেটেটরের ভূমিকা পালন করবেন। একই সঙ্গে শিক্ষার বিষয়বস্তু দিনে দিনে সূক্ষ্ম ও জটিল আকার ধারণ করছে। এ কারণে শ্রেণীকক্ষে বিমূর্ত, অস্পষ্ট বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের নিকট মূর্ত এবং স্পষ্ট করার জন্য প্রচলিত উপকরণের বাইরেও বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের ওপরে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এমনকি কীভাবে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে উপকরণ তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে শিক্ষকদের ধারণা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলো এমনকি ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে বাস্তবে শ্রেণী পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শিক্ষকগণ প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যবহার করেই শ্রেণী পাঠদান পরিচালনা করতে বেশি উৎসাহী যা শিক্ষার্থীদের মুখস্থবিদ্যার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। অর্থাৎ শিক্ষকগণ শুধু পাঠ্যপুস্তক, চক, ডাস্টার, বোর্ড ব্যবহার করেই শিক্ষক-কেন্দ্রিক শ্রেণী পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এর নানাবিধ কারণ থাকলেও মূল কারণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শ্রেণী কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষকদের অনিহা ও অনভিজ্ঞতা।
আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞান বলছে, শ্রেণীকক্ষের পাঠদান কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে পাঠদান ফলপ্রসূ হয় না। এ জন্য শিক্ষককে বিভিন্ন কলা-কৌশল প্রয়োগ করতে হয়। শ্রেণী কার্যক্রমে শুরুতে শিক্ষক এমন কিছু উপকরণ প্রদর্শন করবেন যা শিক্ষার্থীদের জীবনঘনিষ্ঠ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে বাস্তব বা মূর্তমান হয়। অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে এবং পাঠ শিরোনাম তারাই বের করে আনবে। শ্রেণীকক্ষে উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা-অসুবিধা, পার্থক্য ইত্যাদি শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বের করবে এবং তা করার জন্য শিক্ষক সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করবেন। আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানের এই প্রত্যাশা পূরণে এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে শিক্ষকের প্রধান শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে আইসিটি। দিনে দিনে বিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের যে ভীতি বা অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে; আইসিটি ব্যবহার করে ক্লাস নিতে পারলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। বর্তমানে প্রবর্তিত সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটানোর লক্ষ্যে আইসিটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। পাওয়ারপয়েন্টে বিভিন্ন সøাইড প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নগুলোর সমাধান শ্রেণীকক্ষেই বের করে আনা যায়। এ প্রক্রিয়ায় বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের নিকট সহজ ও বোধগম্য হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীর চিন্তন-দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। তাদের মধ্যে সমস্যার সমাধানমূলক দক্ষতা ও সিদ্ধান্ত-গ্রহণ দক্ষতারও বিকাশ ঘটবে। অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির প্রয়োগ, জোড়া বা দলীয় কাজ করিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সহযোগিতামূলক দক্ষতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। শিখন-শেখানো কার্যক্রমের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসৃত করায় এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। অন্যের বক্তব্য শোনা, অন্যের যুক্তি ভালো হলে তা গ্রহণ করা, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ও মনোভাব সৃষ্টি করা সহজ হবে এ প্রক্রিয়ায়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ গ্রহণ করে। এই নীতিমালার বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বলা হয়েছে-
১. ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে কম্পিউটার, ল্যান, নির্ভরযোগ্য উপযুক্ত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এবং গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজিকে প্রাধান্য দিয়ে মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপযুক্ত বিষয়বস্তুর উন্নয়ন করতে হবে।’
২. ‘সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এবং উপযুক্ত মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক শিক্ষার বিষয়বস্তু প্রদান। এ সকল স্থানে প্রয়োজনে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাকরণ।’
৩. ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক শিক্ষার বিষয়বস্তু উন্নয়ন এবং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ।’
৪. ‘ই-লানিং ও দূরশিক্ষণের জন্য সারাদেশে উচ্চ-গতিসম্পন্ন শিক্ষা নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার জন্য একটি টেরেস্ট্রিরিয়াল টিভি চ্যানেল চালু করা হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরিউক্ত প্রস্তাবনা বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে একটি বিপ্লব সংঘটিত হবে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে এর বাস্তবায়ন কবে এবং কীভাবে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা আমরা সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেছিলাম। পরিকল্পনা যতই মহৎ হোক তার বাস্তবায়ন না হলে তা উচ্চাভিলাষ হিসেবেই পরিগণিত হয়। বর্তমান বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের তথৈবচ বরাদ্দ উপরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট আশাবাদী করতে পারেনি। অন্ততপক্ষে ডিজিটাল ক্লাসরুম কর্মসূচি বাস্তবায়নের শুভ উদ্যোগটি যেন অর্থ বা ব্যবস্থাপনার অভাবে মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ে না যায়। তবে ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ পেশা ও পরিবেশগত বাধা দূর করে একটি কর্মসহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন হলে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি চরিত্রগত আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করি।
No comments:
Post a Comment