সবার কাছে মান সম্মত কন্টেন্ট, আপডেট তথ্য, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য সমুহ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ম্যাণুয়াল পৌছে দেয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াস,
February 26, 2017
February 23, 2017
February 22, 2017
February 20, 2017
সহকারি থানা/ উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদের লিখিত পরিক্ষার ফল প্রকাশ। উত্তীর্ণ ৬৪০ জন
সহকারি থানা/ উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদের লিখিত পরিক্ষার ফল প্রকাশ। উত্তীর্ণ ৬৪০ জন
উপরের গুলো স্পস্ট দেখা না গেলে ক্লিক এখানে
February 18, 2017
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে লেসন স্টাডি , এর বাস্তব প্রয়োগ এবং আমাদের মানসিকতা
বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় স্কুলগামী ১০০% ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। পিইডিপি-৩ এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণ চলছে। সকল প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ বছরের এর অভিজ্ঞতায় দেখেছি বিদ্যালয় পরিদর্শনে কোন কর্মকর্তা গেলে কোন শিক্ষক নিজে বলে না স্যার আমার শ্রেণিকার্যক্রম টা পর্যবেক্ষণ করেন। মডেল সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ১ জন শিক্ষক আছেন তিনিই শুধু পাঠ পর্যবেক্ষনের জন্য পাঠ দিয়ে থাকেন। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষকরা পাঠ দেখাতে চায় না। যদি কোন কর্মকর্তা কোন শিক্ষকের শ্রেণিতে চলেই যান ; তাহলে বাধ্য হয়ে যা পাঠ দেন তাই দেখতে হয়।
পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে যেন প্রতিযোগিতা হয় কে কার আগে তাঁর শ্রেণিকার্যক্রম দেখাতে পারে। শিক্ষকদের মধ্যে শ্রেণিকার্যক্রম দেখানোর প্রতিযোগিতার পর্যায়ে আসতে সময় লাগবে । এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে তাদের কে এই প্রতিযোগিতার মানসিকতা আনা যায় ? শিক্ষকদের মধ্যে পাঠ দেখানোর ভীতি কাজ করে। এজন্য অনেক ভালো শিক্ষক ও পাঠ দিতে চায় না। তারা মনে করে পাঠদানের পর কর্মকর্তা অনেক ভুল ধরবে। এখান থেকে পরিত্রানের একটি উপায় হচ্ছে Lesson Study ।
Lesson Study হলো পাঠ সমীক্ষা হলো পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের একটি প্রক্রিয়া
যেখানে শিখন শেখানো কার্যক্রমের মান যাচাই ও উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকগণ তাঁদের সহকর্মীদের সাথে সুশৃংখলভাবে কাজ করেন। শিক্ষকগণ তাঁদের সহকর্মীদের সাথে একযোগে কাজ করে শিখন শেখানো কার্যক্রমের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। পাঠ সমীক্ষা হলো ‘Plan-Do-See cycle’ কাঠামোয় পাঠের ধারাবাহিক মান উন্নয়ন। পাঠ সমীক্ষাকে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন এই তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়।
ধাপ-১: পরিকল্পনা
পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়নে কয়েক সপ্তাহব্যাপী কতকগুলো কাজ করতে হয়। যেমন ঃ
শিক্ষণের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা
পাঠ পরিকল্পনা ও পাঠ পরিচালনা সূচি প্রস্তুতকরণ
সহকর্মীদের সাথে প্রণীত পাঠ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা
পরীক্ষামূলকভাবে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা
পাঠ পরিকল্পনা পরিমার্জন, ইত্যাদি।
ধাপ-২: বাস্তবায়ন
শিখন শেখানো কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ
পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়নকারী শিক্ষক শ্রেণিতে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
সহকর্মীরা শিখন শেখানো কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন।
সহকর্মীরা পর্যবেক্ষণের সময় শিক্ষার্থীরা কী এবং কীভাবে শিখছে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিবেন।
ধাপ-৩: মূল্যায়ন
পাঠের ওপর মূল্যায়ন ও প্রতিফলনমূলক আলোচনা
পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকগণ পাঠটি পূনরায় পর্যালোচনা করবেন এবং
কীভাবে শিখন শেখানো কার্যক্রমের মান উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন।
কীভাবে পাঠ পর্যবেক্ষণ করবেন ও কী কী দেখবেন?
পাঠ পরিকল্পনার চূড়ান্ত করার পর পাঠ সমীক্ষা দলের সদস্যগণ নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে শ্রেণিকক্ষে পাঠ পর্যবেক্ষণের জন্য একত্রিত হবেন।
- পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের মাত্রা
- পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের যথার্থতা ও গুণগতমান
- শিক্ষার্থীদের চিন্তার গভীরতা এবং পদ্ধতি
পর্যবেক্ষকের জন্য নির্দেশনা
নিম্নের নির্দেশনাসমূহ পাঠ পর্যবেক্ষককে সহায়তা করতে পারে।
শিখন শেখানো কার্যক্রম চলাকালে পাঠ পরিকল্পনা কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিখন শেখানো কার্যক্রম মানসম্মত হচ্ছে কিনা সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।
শিক্ষার্থীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য চেয়ার অথবা বেঞ্চে সারাক্ষণ বসা পরিহার করা। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বেশি কথা না বলা এবং অন্য পর্যবেক্ষকের সাথে গল্প না করা এবং নীরবে পাঠ পর্যবেক্ষণ করা।
পর্যবেক্ষণ শেষে অর্থপূর্ণ মতামত দেওয়ার জন্য পর্যবেক্ষণের সময়ে শিক্ষার্থীদের উক্তি, মিথষ্ক্রিয়া এবং শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভুল করে ও সংশোধন করে ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে।
পাঠ শেষ হওয়ার পর কীভাবে আলোচনা করবেন ?
সাধারণ নিয়মাবলী
পাঠ পর্যবেক্ষণের পর বাস্তব উদাহরণের ভিত্তিতে মন্তব্য করতে হবে।
উন্নয়নের ক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তাবনাসমূহ প্রণীত হবে। যেমন, আমি যদি শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতাম তাহলে আমি ..................... করতাম।
আলোচনা হবে অবশ্যই শিখন শেখানো কার্যক্রমের ওপর, শিক্ষকের কোন সমালোচনা হবে না।
আলোচনার বিষয়াদি/তথ্যাদি অবশ্যই পাঠ সমীক্ষা অফিসে সংরক্ষণ করতে হবে। পাঠ সমীক্ষা দলের নেতা সেই তথ্যাদি দলের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে বিতরণ করবেন।
মূলবার্তা
পাঠের মানোন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটিকে অব্যাহত রাখতে হবে। এটি বন্ধ হলে পেশাগত উন্নয়নও ব্যহত হবে।
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে আমরা এই Lesson Study আমাদের বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজ স্বাভাবিক রেখেই করতে পারি, এই Lesson Study কার্যক্রম কে কে পরিদর্শন করবে ?
ধরুন একটি বিদ্যলয়ে ৮ জন শিক্ষক আছে। প্রত্যেক মাসে একজন শিক্ষককে Lesson Study কার্যক্রম করতে হবে। প্রধান শিক্ষক একটি বাৎসরিক রুটিন তৈরি করবেন । বাৎসরিক রুটিনে প্রত্যেক শিক্ষকের নাম এবং Lesson Study ও সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করবেন। প্রত্যেক মাসের শুরুতে নির্ধারিত শিক্ষক Lesson Plan তৈরি করবেন এবং সহকর্মীদের টিফিনের ফাঁকে দেখাবেন। সহকর্মীদের দেখানোর পর নিধারিত শিক্ষক যে কোন বৃহস্পতিবারে স্টাফ মিটিং এ Lesson Plan নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এর পর নির্ধারিত শিক্ষক Lesson Plan টি চূড়ান্ত করবেন।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রত্যেক মাসে ১০ টি , ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর ৫ টি এবং সহকারী ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর ৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে থাকেন। প্রত্যেকে স্ব স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার নিকট হতে বিদ্যালয় পরিদর্শনের অগ্রিম সময়সূচী অনুমোদন করে নেন। পরিদর্শনকারী কর্মকর্তারা এই অগ্রিম সময়সূচী বিদ্যালয়ে জানিয়ে দিবেন। তিনি যে দিন উপস্থিত হবেন ঐ দিনে ঐ পাঠটি নির্ধারিত শিক্ষক উপস্থাপন করবেন। নির্ধারিত শিক্ষক এই পাঠটি শেষের আগের পিরিয়ডে নিতে পারেন। এ সময় তিনি অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি বা অন্য কোন কাজ দিয়ে ধরে রাখতে পারেন। এই পাঠটি উপস্থাপনের সময় সকল শিক্ষক এবং পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। পাঠ উপস্থাপনের পর উপরে উল্লেখিত নিয়মানুসারে পাঠ পর্যালোচনা করবেন। এর ফলে ঐ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক এবং পরিদর্শনকারী কর্মকর্তার ও পেশাগত উন্নয়ন হবে।
আর যদি ঐ মাসে কোন পরিদর্শনকারী কোন কর্মকর্তার পরিদর্শনসূচী না থাকে তাহলে নির্ধারিত শিক্ষক পাঠটি উপস্থাপন করবেন এবং অন্যান্য শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করবেন। এভাবে প্রত্যেক মাসে বাধ্যতামূলক ভাবে পাঠ উপস্থাপন করলে শিক্ষকদের মধ্যে পাঠ উপস্থাপন ভীতি দূর হবে এবং সকল শিক্ষক ও পরিদর্শনকারী কর্মকর্তার পেশাগত মান উন্নয়ন হবে আমি মনে করি।
" গালি দিয়েন না , কমেন্টস দিয়েন।"
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির ( PTA ) ভূমিকা
প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শিক্ষার মূল স্তর।
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কোনো
বিকল্প নেই। আর তাই প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা
ব্যবস্থাপনার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শিক্ষার মূল স্তর।
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কোনো
বিকল্প নেই। আর তাই প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা
ব্যবস্থাপনার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে। সেলক্ষ্যে এসএমসির পাশাপাশি
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রাণালয় প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে
শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি গঠনের ব্যবস্থা করেছে। বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন
পরিকল্পনা বা SLIP (School Level Improvement Plan) এর কার্যক্রম শুরু
হওয়ার পর থেকে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়
পর্যায়ে পরিকল্পনা, জবাবদিহিতা, সামাজিক সম্পৃক্ততা ইত্যাদির সঙ্গে শিক্ষক ও
অভিভাবকদের নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা
কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়ন, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং প্রতিটি
বিদ্যালয়কে একটি শক্তিশালী সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে
শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০ জন। কমিটির
১০ জন সদস্যের মধ্যে ২ জন শিক্ষক ছাড়া বাকি ৮ জনই বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের
মধ্য থেকে নির্বাচিত সদস্য। নির্বাচিত অভিভাবকদের মধ্য থেকে একজন সদস্যকে
সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদাধিকার বলে
শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্য-সচিব মনোনীত হন। সমিতি গঠনের লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্য নিন্মরূপ:* শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা।
* শিক্ষক-অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য গৃহীত উদ্যোগকে জোরদার করা।
* তৃণমূল পর্যায়ে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা।
* বিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ডে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করা।
* শিক্ষক-অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মূল্যায়ন করা।
* স্থানীয়ভাবে সমস্যার সমাধানকে উৎসাহিত করা।
* কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা।
যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিন দশক পূর্বে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি গঠিত হয়েছিল বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির কর্মকাণ্ড স্থিমিত এবং কিছু বিদ্যালয়ে এর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
বিদ্যালয় এলাকায় জরিপ কাজ পরিচালনায় শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যরা খুব একটা মনোনিবেশ করেন না। বিদ্যালয়ের শিশুদের ঝরে পড়া রোধে তাদের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। স্কুল পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির ভূমিকা নেই বললেই চলে। বিদ্যালয়গৃহ মেরামত, বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা এবং বিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে তাদেরকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। শিশুদের মানবিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সচেতনতাবোধ আনয়নের লক্ষ্যে তাদের প্রচেষ্টা কমই লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় এলাকাবাসির সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি মনোনিবেশ করে না। অভিভাবকগণ বাড়িতে যাতে লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন সে বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন না।
শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো শিশুদের বিদ্যালয় ত্যাগের কারণ অনুসন্ধান করে বিদ্যালয় ত্যাগ রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সমিতির সদস্যগণ বিষয়টি নিয়ে মোটেই ভাবেন না। এক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যই মনে করেন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় দায়-দায়িত্ব সরকার এবং এসএমসির। স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা, জবাবদিহিতা এবং বিদ্যালয়ের সামাজিক মালিকানার ধারণা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার কথা থাকলেও শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি বিষয়টি অনুধাবন করেন না। বিদ্যালয়ের প্রকৃত মালিক স্থানীয় জনগণ। তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্যই এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কাজেই বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে জনগণের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব স্থানীয় জনগণের। শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিদ্যালয়ের মালিকানাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া যেতে পারে। বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা, শিশুদের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা, একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় গড়ে তুলতে স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করা ইত্যাদি কাজে এসএমসির পাশাপাশি শিক্ষক-অভিভাবক সমিতিকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিশু ছাড়া বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কাজেই PTA (Parent Teacher Association) বা শিক্ষক-অভিভাবক সমিতিকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের কাজে আরো সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। প্রত্যেক অভিভাবকের জন্য বছরে অন্তত একবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে; যেন তারা উপলব্ধি করতে পারেন বিদ্যালয়টি তাদের। হয়ত তারা একদিন থাকবেন না। কিন্তু তাদের বিদ্যালয়টি টিকে থাকলে তাদের সন্তানেরা লেখাপড়া শিখে বড় হবে; তারা দেশের সম্পদ হবে, দেশকে গড়ে তুলবে এবং একদিন উন্নত জাতি হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হবে। তাই আমরা মনে করি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক-অভিভাবক সমিতিকে সক্রিয় করা একান্ত প্রয়োজন।
ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কি আমাদের কেউ?
একটি ছেলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে সেটা জানলে আমার কিশোরবেলায় যে অনুভূতি হত সেগুলো এরকম:
১. ছেলেটি ইংরেজি জানে। ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। (ইংরেজি জানা তখন একটা মারাত্মক ব্যপার ছিল। ইংরেজি জানা মানেই শিক্ষিত!)
২. সে ধনী পরিবারের সন্তান এবং সে স্মার্ট।
৩. সে আমার আশাপাশের কেউ নয়। আমার সীমানার বাইরে তার বসবাস। তার সঙ্গে আমার সাবলীল কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা!
আরেকটু বড় হয়ে, একরম একটি ছেলে দেখলে আমার ধারনা হত,
১. ছেলেটি ইংরেজি জানে। ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। (ইংরেজি জানা তখন একটা মারাত্মক ব্যপার ছিল। ইংরেজি জানা মানেই শিক্ষিত!)
২. সে ধনী পরিবারের সন্তান এবং সে স্মার্ট।
৩. সে আমার আশাপাশের কেউ নয়। আমার সীমানার বাইরে তার বসবাস। তার সঙ্গে আমার সাবলীল কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা!
আরেকটু বড় হয়ে, একরম একটি ছেলে দেখলে আমার ধারনা হত,
February 17, 2017
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১০০% করার টেকনিক: একজন শিক্ষকের অভিজ্ঞতা
কামাল উদ্দিন: প্রধান শিক্ষক, রুমকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উখিয়া কক্সবাজার।
এই টেকনিক প্রয়োগ করে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১০০% করেছি। আপনারা ও প্রয়োগ করতে পারেন। টেকনিকটি নিচে দেওয়া হলো—
এই টেকনিকের সুবিধাসমূহ:
এই টেকনিক প্রয়োগ করে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১০০% করেছি। আপনারা ও প্রয়োগ করতে পারেন। টেকনিকটি নিচে দেওয়া হলো—
১। বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট এলাকার পাড়াগুলোর তালিকা করুন।
২। প্রতিটি শ্রেণিতে কোন পাড়ায় কতজন শিক্ষার্থী আছে তার একটি তালিকা করুন।
৩। একেক পাড়ার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একেক
রকম। সেক্ষেত্রে পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক পাড়ার শিক্ষার্থীদের একটি দলে
অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৪। ক্যাচমেন্ট এলাকার বাইরের শিক্ষার্থীদেরকে, যে পাড়ার শিক্ষার্থী সংখ্যা কম আছে সে রকম একটি পাড়ার দলের সাথে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
৫। প্রতি দলে পাড়ার তিন প্রান্ত থেকে তিন
জন শিক্ষার্থী বাছাই করুন। বাছাইকৃত তিন জন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে এক জন
দলনেতা নির্বাচন করুন। অপর দুই জন সহকারি দলনেতা।
৬। নির্বাচিত এই তিন জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন তাদের পাড়ার তাদের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসবে। ধরা যাক, তাদের পাড়ায় তাদের ক্লাসে ১২ জন শিক্ষার্থী আছে। একেক জনের দায়িত্বে চার জন শিক্ষার্থী।
৭। নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে এমন শিক্ষার্থীদের দলনেতা নির্বাচন করতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার হালচাল
তথ্যপ্রযুক্তি, জ্ঞান–বিজ্ঞানে
বিশ্ব তীব্র গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা চলছে এক দেশের সাথে আরেক
দেশের। এই প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির অবস্থান কোথায়? কেউ
যদি বলেন আমরা তো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ারই যোগ্যতা অর্জন করতে পারলাম না।
তাহলে খুব একটা ভুল হবে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি? নিশ্চিতভাবেই উন্নতমানের শিক্ষা ও তার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই আমরা শুধু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা নয়, একটি স্বনির্ভর জাতিতে পরিণত হবো। কিন্তু আমাদের কি দুর্ভাগ্য, উন্নতমানের
শিক্ষা তো দূরে থাক আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাই ভঙ্গুর। পুরো চিত্রই যে
হতাশাজনক তা নয়। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান চিত্র দেখে আশাবাদি
হওয়াটাও কঠিন। এ শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার ছাড়া এটি প্রকৃত শিক্ষাদান ও
জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারবে না। শুরুতে যেটি দরকার তা হচ্ছে এর গলদগুলো খুঁজে
বের করা। তারপরই সম্ভব সঠিক সমাধানে পৌঁছা। এই লেখায় শিক্ষাব্যবস্থার
স্তরভিত্তিক সমস্যাগুলো কি কি তা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
শিক্ষা: প্রাথমিক প্রসঙ্গ
মানুষের শিক্ষা লাভের প্রক্রিয়া মানব জাতির ইতিহাসের মতোই পুরনো। মানব জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে তাই আমরা পাই হাজারো বক্তব্য। দার্শনিকেরা যেমন শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত তেমনি রাষ্ট্রনায়ক এবং যেকোন ধরনের চিন্তাবিদেরাও এ বিষয়ে ভাবিত। কয়েক হাজার বছর আগে হলেও ’শিক্ষা’র গুরুত্ব নিয়ে প্রাজ্ঞ এরিস্টটল যা বলেছিলেন তা সর্বকালের মানব জীবনের জন্য প্রযোজ্য। এরিস্টটল শিক্ষা থাকা আর না-থাকার পার্থক্য করতে গিয়ে বলেন, শিক্ষা থাকা আর না-থাকার পার্থক্য জীবিত ও মৃতের মধ্যকার পার্থক্যের সমান।
’শিক্ষা’ নিয়ে কখনো কথা বলেননি বা ভাবেন নি লেখাপড়া জানা জনগোষ্ঠির মধ্যে এমন মানুষ বিরল। আমাদের সে বলা হয়ত চিন্তা-ভাবনা ছাড়া সাধারন কথা। হয়ত তা প্রতিদিন স্কুল বা কলেজে গিয়ে যে জ্ঞান লাভ করেছি বা করতে পারি নি তা নিয়ে কোনো বক্তব্য! কিন্তু আমরা যদি মানব জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, প্রয়োজনীয় শিক্ষার ধরন এসব নিয়ে ভাবি তাহলে চমৎকার সব ধারনা আমাদের প্রত্যেকের ভিতর থেকে বের হয়ে আসবে। শিক্ষা: প্রাথমিক প্রসঙ্গ বইটিতে এমন কিছু চিন্তা বা আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
February 16, 2017
February 14, 2017
গনিত ৫ম সমাধান সমগ্র বই
প্রথম অধ্যায় গুন (১)
২য় অধ্যায় ভাগ (২)
৩য় অধ্যায় ৩ ( ক)
৩য় অধ্যায় ৩ (খ)
৪র্থ অধ্যায় গড় (৪)
৫ম অধ্যায় ল.সা.গু ও গ. সা. গু
৬ ষ্ঠ অধ্যায় (৬)
৭ম অধ্যায় (ক)
৭ম অধ্যায় (খ)
৭ম অধ্যায় (গ)
৭ম অধ্যায় ( ঘ)
৮ ম অধ্যায় (ক)
৮ম অধ্যায় (খ)
৯ম অধ্যায়
১০ অধ্যায়
১০ম অধ্যায় (ক)
১১ অধ্যায়
১২ অধ্যায় (ক)
১২ অধ্যায় (খ)
১২ অধ্যায় (গ)
১৩ অধ্যায় জ্যামিতি
১৪ অধ্যায় ক্যালকুলেটর
২য় অধ্যায় ভাগ (২)
৩য় অধ্যায় ৩ ( ক)
৩য় অধ্যায় ৩ (খ)
৪র্থ অধ্যায় গড় (৪)
৫ম অধ্যায় ল.সা.গু ও গ. সা. গু
৬ ষ্ঠ অধ্যায় (৬)
৭ম অধ্যায় (ক)
৭ম অধ্যায় (খ)
৭ম অধ্যায় (গ)
৭ম অধ্যায় ( ঘ)
৮ ম অধ্যায় (ক)
৮ম অধ্যায় (খ)
৯ম অধ্যায়
১০ অধ্যায়
১০ম অধ্যায় (ক)
১১ অধ্যায়
১২ অধ্যায় (ক)
১২ অধ্যায় (খ)
১২ অধ্যায় (গ)
১৩ অধ্যায় জ্যামিতি
১৪ অধ্যায় ক্যালকুলেটর
February 13, 2017
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার দৈন্যদশা
‘শিক্ষা’ মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি সুস্থ, সুন্দর, উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষিত মানুষ অমূল্য সম্পদ। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত লোকবলের অধিকারী, সে জাতি তত বেশি উন্নত ও মর্যাদাবান। আমাদের দেশের মানুষ অতীতে শিক্ষার কদর খুব একটা না বুঝলেও এখন কিছুটা বুঝতে শিখেছে। শিক্ষার প্রতি এই যে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ফলে আমরা অনেক ঝামেলা থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হচ্ছি। কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, অন্ধবিশ্বাস, অপবিশ্বাস, সামপ্রদায়িকতা, প্রতারণা— এসব যেমন সমাজদেহ থেকে লোপ পাচ্ছে, তেমনি আর্থিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিশ্ববাসীর।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে শিক্ষা ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো সুন্দর ও টেকসই পথ নেই। তাই সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত প্রত্যেকেই শিক্ষার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নানা রকম ত্রুটি আছে। আমরা যদি কিছু মোটা দাগের ত্রুটি শনাক্ত করি তাহলে দেখব, কারিকুলামে ত্রুটি, প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে ত্রুটি, শিক্ষক নিয়োগে ত্রুটি, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ত্রুটি, পরীক্ষা পদ্ধতিতে ত্রুটি, শহর ও গ্রামীণ পরিবেশগত ত্রুটি। এতসব ত্রুটি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা সেবা।
তবে প্রাথমিক শিক্ষায় সবচেয়ে সমস্যা হলো শিক্ষকের পর্যাপ্ততা ও শিক্ষার্থীর উপযুক্ত ক্লাসরুম সংকট। হাতে গোনা শহরের কয়েকটি স্কুল ছাড়া— বাংলাদেশের সব গ্রামের স্কুলগুলোর চিত্র মোটামুটি একই রকম। একবিংশ শতাব্দীর এই অত্যাশ্চর্য যুগে এসেও বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি হাসির উদ্রেক না করে পারে না। একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দিই তাহলে হয়তো বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় একটি ছোট্ট খবর ছাপা হয় ইঞ্চি দুয়েক জায়গা জুড়ে। ওই ছোট খবরটি মূলত সমগ্র বাংলাদেশেরই একটি বাস্তবচিত্র। সেই খবরে প্রকাশিত হয় ‘নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এসব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের ৬৬টি ও সহকারী শিক্ষকের ১০৭টি পদ শূন্য রয়েছে।’ এই তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে উদ্বেগের না হলেও একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ বলেই মনে হয়। একটি উপজেলার ২০৪টি স্কুলের মধ্যে যদি ১৭৩ জন শিক্ষকের পদই শূন্য থাকে, তাহলে বুঝতে হবে গ্রামের মানুষেরা প্রাথমিক
শিক্ষার নামে যা পাচ্ছে তা মূলত শুভংকরের ফাঁকি।
শুধু শিক্ষক সংকটই প্রাথমিক শিক্ষাকে পিছনের দিকে টানছে এমন নয়। শিক্ষার্থীর চেয়ে স্কুলগুলোতে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বাচ্চাই ক্লাসরুমে বসে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না। প্রায় স্কুলেই বেঞ্চের চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। দেশের অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীরাই ক্লাস করে খোলা আকাশের নিচে। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে খোলা আকাশের নিচে এরকম অভিনব পাঠদান পদ্ধতি আছে কিনা আমার জানা নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের আরেকটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার পুনঘরদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার বছরের করুণ কাহিনি। সচিত্র সেই প্রতিবেদন পড়তে বেশ ভালো লাগলেও যারা প্রতিদিনই ওইভাবে ক্লাস করে কেবল তারাই জানে, বিষয়টি কত যন্ত্রণাদায়ক। পুনঘরদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন ভবনটিতে তিনটি কক্ষ ছিল। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ভবনটি
জীর্ণ হয়ে পড়ে এবং ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে
প্রতিষ্ঠাকালীন ভবনটি ভেঙে নিলামে বিক্রি করা হয়। তৈরি করা হয় ছয়গজের একটি
টিনের ঘর। সেই ঘরে ১৫৭ জন শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান অসম্ভব। তাই বাধ্য
হয়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বাইরে গাছতলায়
ক্লাসের ব্যবস্থা করে।
প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কিছু কথা
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের
সংবিধানে এই মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি আছে। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি
গৃহীত হওয়ার প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ
চলছে। আজকের আলোচনা প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৯ সালে, তবে তা পৌর এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৩০ সালে বেঙ্গল (রুরাল) প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ৬-১১ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং ১৯৫৯ সালে শিশু অধিকারের ঘোষণায় প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ-উত্তর পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে ২১ দফায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। ১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন এবং ১৫ বছরের মধ্যে আট বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করে। প্রায় একই সময়ে ইউনেসকোর উদ্যোগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০ বছর মেয়াদি ‘করাচি পরিকল্পনা’ প্রণীত হয়। তাতে বলা হয়, এই অঞ্চলের ১৫টি দেশে সাত বছর মেয়াদি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশগুলোর দেশজ উৎপাদনের অন্তত ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে। ১৯৭৪ সালে কুদরাত-এ-খুদা প্রণীত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন’ ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুপারিশ করে। ১৯৮১ সালে পৃথক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সব দেশ একমত হয়।
২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯১৮ সালের মধ্যে দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাতে আরও বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের।’ ২০১০-১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়: কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বাধ্যতামূলক করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেশাত্মবোধের বিকাশ ও দেশ গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা; শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, কৌতূহল, প্রীতি, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা; বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক করা এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা; শিক্ষার্থীকে জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জন এবং পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলা; কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহ ও মর্যাদাবোধ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা সৃষ্টি; আদিবাসীসহ সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা; সব ধরনের প্রতিবন্ধীসহ সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বলা হয়, বহুধাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার (কমিউনিটি বিদ্যালয়, রেজিস্ট্রিকৃত ও রেজিস্ট্রিহীন বিদ্যালয়, সরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ইত্যাদি) মধ্যে বিরাজমান প্রকট বৈষম্য দূর ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে আট বছর মেয়াদি সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হবে। গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা, মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে আনন্দদায়ক সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী যাতে চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ও অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে মানসম্মত প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে স্তরভিত্তিক কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবতা ও চাহিদার আলোকে পুনর্বিন্যাস করা এবং স্থানীয় জনসাধারণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরও ক্ষমতা প্রদান, নারী অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, যথাযথ মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষকদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন, কার্যকর পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করা হবে।
এ ছাড়া, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, দেশে-বিদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষকের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, ২০১৮ সাল নাগাদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০-এ উন্নীত করা, ছুটির সময় ব্যতীত শিক্ষাসংক্রান্ত কাজের বাইরে অন্য কাজে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত না করার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রসঙ্গে ধারানির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজি, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, সামাজিক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিচিতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জীবন উপযোগী প্রাক-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা প্রদান করা হবে, যাতে কোনো কারণে যারা উচ্চতর স্তরের শিক্ষা লাভ করতে পারবে না, তারাও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
শিক্ষা মূল্যায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্কুল কর্তৃক ধারাবাহিক মূল্যায়ন, তৃতীয় শ্রেণি থেকে ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। পঞ্চম শ্রেণি শেষে অভিন্ন প্রশ্নে সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা—জেএসসি) সংশ্লিষ্ট বোর্ড গ্রহণ করবে।
এখন দেখা যাক, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর উন্নয়নে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার জন্য সরকারকে কী কী করতে হবে। বহুধাবিভক্ত প্রাথমিক শিক্ষায় সমন্বয়ের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন? মোটা দাগে বলা যায়, বিদ্যমান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যে সম্পদের পুনর্বিন্যাস ও জনবল কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কীভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে, তার নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষকদের সঙ্গে কীভাবে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি সমন্বয় করা হবে, তারও বিহিত হওয়া প্রয়োজন। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক কলেজগুলোকে কীভাবে মাধ্যমিক স্তরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে? প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, অধ্যক্ষ, প্রভাষকদের চাকরি, বেতনক্রম, প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণের মতো বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। রয়েছে বিষয় শিক্ষক নিয়োগের জটিলতাও। অবসান ঘটাতে হবে নানা ধারার শিক্ষাব্যবস্থার।
এসব সমস্যা নিরসনে প্রথমেই নতুন কিন্ডারগার্টেন, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজ প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি। বর্তমানে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণির (প্রাক-প্রাথমিকসহ) শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতা প্রকট। অবকাঠামো উন্নয়নে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে সমৃদ্ধ পাঠাগার ও হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য গবেষণাগার থাকবে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষার জগদ্দল পাথর দুনিয়ার কোথাও নেই। আবার অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষাও শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে হলে জেএসসি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা করা উচিত এবং এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করার প্রয়োজন হতে পারে।
কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৯ সালে, তবে তা পৌর এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৩০ সালে বেঙ্গল (রুরাল) প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ৬-১১ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং ১৯৫৯ সালে শিশু অধিকারের ঘোষণায় প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ-উত্তর পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে ২১ দফায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। ১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন এবং ১৫ বছরের মধ্যে আট বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করে। প্রায় একই সময়ে ইউনেসকোর উদ্যোগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০ বছর মেয়াদি ‘করাচি পরিকল্পনা’ প্রণীত হয়। তাতে বলা হয়, এই অঞ্চলের ১৫টি দেশে সাত বছর মেয়াদি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশগুলোর দেশজ উৎপাদনের অন্তত ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে। ১৯৭৪ সালে কুদরাত-এ-খুদা প্রণীত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন’ ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুপারিশ করে। ১৯৮১ সালে পৃথক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সব দেশ একমত হয়।
২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯১৮ সালের মধ্যে দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাতে আরও বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের।’ ২০১০-১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়: কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বাধ্যতামূলক করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেশাত্মবোধের বিকাশ ও দেশ গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা; শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, কৌতূহল, প্রীতি, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা; বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক করা এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা; শিক্ষার্থীকে জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জন এবং পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলা; কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহ ও মর্যাদাবোধ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা সৃষ্টি; আদিবাসীসহ সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা; সব ধরনের প্রতিবন্ধীসহ সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বলা হয়, বহুধাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার (কমিউনিটি বিদ্যালয়, রেজিস্ট্রিকৃত ও রেজিস্ট্রিহীন বিদ্যালয়, সরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ইত্যাদি) মধ্যে বিরাজমান প্রকট বৈষম্য দূর ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে আট বছর মেয়াদি সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হবে। গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা, মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে আনন্দদায়ক সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী যাতে চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ও অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে মানসম্মত প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে স্তরভিত্তিক কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবতা ও চাহিদার আলোকে পুনর্বিন্যাস করা এবং স্থানীয় জনসাধারণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরও ক্ষমতা প্রদান, নারী অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, যথাযথ মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষকদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন, কার্যকর পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করা হবে।
এ ছাড়া, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, দেশে-বিদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষকের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, ২০১৮ সাল নাগাদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০-এ উন্নীত করা, ছুটির সময় ব্যতীত শিক্ষাসংক্রান্ত কাজের বাইরে অন্য কাজে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত না করার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রসঙ্গে ধারানির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজি, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, সামাজিক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিচিতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জীবন উপযোগী প্রাক-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা প্রদান করা হবে, যাতে কোনো কারণে যারা উচ্চতর স্তরের শিক্ষা লাভ করতে পারবে না, তারাও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
শিক্ষা মূল্যায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্কুল কর্তৃক ধারাবাহিক মূল্যায়ন, তৃতীয় শ্রেণি থেকে ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। পঞ্চম শ্রেণি শেষে অভিন্ন প্রশ্নে সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা—জেএসসি) সংশ্লিষ্ট বোর্ড গ্রহণ করবে।
এখন দেখা যাক, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর উন্নয়নে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার জন্য সরকারকে কী কী করতে হবে। বহুধাবিভক্ত প্রাথমিক শিক্ষায় সমন্বয়ের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন? মোটা দাগে বলা যায়, বিদ্যমান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যে সম্পদের পুনর্বিন্যাস ও জনবল কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কীভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে, তার নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষকদের সঙ্গে কীভাবে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি সমন্বয় করা হবে, তারও বিহিত হওয়া প্রয়োজন। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক কলেজগুলোকে কীভাবে মাধ্যমিক স্তরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে? প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, অধ্যক্ষ, প্রভাষকদের চাকরি, বেতনক্রম, প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণের মতো বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। রয়েছে বিষয় শিক্ষক নিয়োগের জটিলতাও। অবসান ঘটাতে হবে নানা ধারার শিক্ষাব্যবস্থার।
এসব সমস্যা নিরসনে প্রথমেই নতুন কিন্ডারগার্টেন, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজ প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি। বর্তমানে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণির (প্রাক-প্রাথমিকসহ) শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতা প্রকট। অবকাঠামো উন্নয়নে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে সমৃদ্ধ পাঠাগার ও হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য গবেষণাগার থাকবে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষার জগদ্দল পাথর দুনিয়ার কোথাও নেই। আবার অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষাও শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে হলে জেএসসি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা করা উচিত এবং এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করার প্রয়োজন হতে পারে।
কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
February 12, 2017
যারা ৫ম শ্রেনির গণিত পড়ান তাদের জন্য একটি কার্যকরি ও সহায়ক সাইড
প্রাথমিক গণিত
কোর্সটি
একেবারে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য গণিতের একটি কোর্স। বাংলাদেশের জাতীয়
কারিকুলামের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এই কোর্সটি ডিজাইন করা হয়েছে।
তবে, কোর্সের শুরুতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত যে সকল মৌলিক বিষয়
শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে আয়ত্ত্ব হয়েছে তাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অর্থাৎ এটি
শুরু হবে সংখ্যার ধারণা, সংখ্যা লেখার পদ্ধতি, রোমান সংখ্যা পদ্ধতি হয়ে
এখনকার দশমিক পদ্ধতি দিয়ে। এরপর সাধবরণ চার নিয়মের কিছু বিষয়। থাকবে মৌলিক
সংখ্যার ধারণা এবং মৌলিক সংখ্যা চেনার উপায়। ফিরে দেখা হবে ঐকিক নিয়ম এবং
যদিও সিলেবাসে নেই তারপর চলিত নিয়মের ধারণা। এরপর পঞ্চম শ্রেণীর
পাঠ্যক্রমের গুণ, ভাগ, চার প্রক্রিয়া, গড়, লসাগু/গসাগু, গাণিতিক প্রতীক ও
বাক্য, সাধারণ ও দশমিক ভগ্রাংশ, শতকরা, পরিমাপ, সময়, উপাত্ত বিন্যস্তকরণ
এবং জ্যামিতি। সংখ্যার মত জ্যামিতিও মূল বিষয় থেকে শুরু হবে। পাঠ্যক্রম
অনুসরণ করা হলেও এটি বই-এর ধারাবাহিকতা অনুসরণ করবে না।
February 11, 2017
উবারের উড়ুক্কু গাড়ি?
(ফ্লাইং কার) গবেষণায় সহায়তা করতে নাসার সাবেক এক প্রকৌশলীকে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার। মার্ক মুরে নামের ওই প্রকৌশলী ‘উবার এলিভেট’ বিভাগের এভিয়েশন প্রকৌশল পরিচালক পদে যোগ দিয়েছেন।
উড়ন্ত গাড়ির ব্যাপারে আগ্রহ জানিয়ে গত বছরের অক্টোবরে
শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল উবার। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়,
তাদের তৈরি যানটি উল্লম্বভাবে ওঠানামা করবে। শ্বেতপত্রে বলা হয়, শহরের
যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়নের ফলে প্রতিদিনের যাত্রাপথে ব্যয় করা সময়
অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা যাবে। উঁচু দালান যেমন একই ভূমির কার্যকরভাবে ব্যবহার
নিশ্চিত করে, ত্রিমাত্রিক এয়ারস্পেস ব্যবহার করে একইভাবে শহরের আকাশযানগুলো
যাতায়াতের সময় কমিয়ে ফেলবে।
নাসায় কর্মরত অবস্থায় একই ধরনের উড়ন্ত যানের হোয়াইট পেপার
প্রকাশ করেছিলেন মার্ক মুরে। সম্ভবত সে কারণেই এই প্রকল্পের জন্য উবার
কর্তৃপক্ষ তাঁকে বেছে নিয়েছে। উবারে মার্ক মুরের যোগদানকে ইতিমধ্যে স্বাগত
জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে মার্ক মুরে বলেন, আকাশযানের জন্য মোড় ঘুরিয়ে
দেওয়ার মতো সম্ভাব্য প্রযুক্তি হচ্ছে বৈদ্যুতিক পরিচালন ব্যবস্থা। এতে
একমাত্র চ্যালেঞ্জ হলো বর্তমান ব্যাটারির স্টোরেজ।
অবশ্য চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়ির জন্য উবার ইতিমধ্যে
ভলভো ও ডেইমলারের সঙ্গে বিনিয়োগ করছে। এবার উড়ন্ত যান তৈরিতেও মনযোগ দিল
প্রতিষ্ঠানটি।
উবার ছাড়াও এ ধরনের উড়ুক্কু যানের প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে
স্লোভাকিয়ার প্রতিষ্ঠান অ্যারোমবিল। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে তাদের কার্যকরী
পরীক্ষামূলক সংস্করণ (প্রোটোটাইপ) দেখিয়েছে। চলতি বছরেই অ্যারোমবিলের
গাড়িটি বাজারে আসার কথা রয়েছে।
এস এম নজিবুল্লাহ চৌধুরী, সূত্র: বিবিসিফায়ারফক্স মজিলা ঠিকঠাক কাজ না করলে
ওয়েবসাইট দেখার জনপ্রিয় ব্রাউজার মজিলা ফায়ারফক্স। কখনো যদি মনে হয় ফায়ারফক্স ঠিকভাবে কাজ করছে না বা কিছুটা ধীরগতির হয়ে গেছে কিংবা কাজ করতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে (ফ্রিজ), তাহলে ‘রিফ্রেশ ফায়ারফক্স’ সুবিধা ব্যবহার করে ব্রাউজারের গতি বাড়ানো যাবে। আগের সংস্করণগুলোতে সুবিধাটি রিসেট ফায়ারফক্স নামে থাকলেও বর্তমান সংস্করণগুলোতে Refresh Firefox নামে পাওয়া যাবে।
এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণে হালনাগাদ করলে অনেক সময় ‘Looks like you’ve reinstalled Firefox. Want us to clean it up for a fresh like-new experience-with a Refresh Firefox button at the other end’ বার্তা দেখিয়ে ফায়ারফক্স রিফ্রেশ করার জন্য বলতে পারে। কিন্তু চাইলেই যেকোনো সময় এটি করতে পারবেন। এ জন্য ফায়ারফক্স চালু করে ওপরে ডান দিকের তিন লাইনের সেটিংস মেন্যুতে ক্লিক করুন। মেন্যুর ঠিক নিচেই প্রশ্নবোধক আইকনে ক্লিক করলে আরও কিছু মেন্যু আইটেম দেখতে পাবেন। এখান থেকে Troubleshooting information-এ ক্লিক করুন। ট্রাবলশুটিং ইনফরমেশন পেজের ডান দিকে ওপরে Refresh Firefox বোতামে ক্লিক করুন। রিফ্রেশ ফায়ারফক্সের নামে একটি ডায়ালগ বক্স আসবে এবং এই প্রক্রিয়াটিতে আপনি সম্মতি দিলে সে ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন হবে সেটি জানতে চাইবে। সম্মতি জানাতে Refresh Firefox বোতামে আবার ক্লিক করুন। এখন কাজটি করতে ফায়ারফক্স নতুন একটি প্রোফাইল ফোল্ডার বানাবে। ব্রাউজারের বর্তমান সেটিংস ডিফল্ট সেটিংস করে দেবে। ফায়ারফক্স সেটিংস এবং ব্যক্তিগত তথ্য নতুন প্রোফাইল ফোল্ডারে যোগ হয়ে যাবে। রিফ্রেশ ফায়ারফক্স করলে এক্সটেনশন, থিম এবং কাস্টমাইজেশনগুলো মুছে যাবে। প্লাগ-ইনস রিসেট হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনার ব্রাউজিং কুকি, হিস্ট্রি, বুকমার্ক, সেভ পাসওয়ার্ডসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ঠিক থাকবে। তবে কিছু অপশন এবং সেটিংস রিসেট হয়ে ডিফল্ট সেটিংস হয়ে যাবে। এবং সেটি Import Complete উইন্ডোর মাধ্যমে দেখাবে। সেটিংস ইমপোর্ট এবং সংরক্ষণ শেষ হলে রিফ্রেশ ফায়ারফক্স সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে ফায়ারফক্স রিস্টার্ট করে পুনরায় স্বাভাবিক কাজ করতে পারবেন।
February 10, 2017
February 8, 2017
যেভাবে হ্যাক হচ্ছে আপনার ফেসবুক
ফেসবুকের মেসেঞ্জারে বার্তা আসছে ‘ইজ দিস ইউ?’। বার্তার সঙ্গে থাকছে ব্যবহারকারীর প্রোফাইল ছবি ও প্রোফাইলের একটি লিংক। ওই লিংকে ক্লিক করলেই সর্বনাশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক হ্যাক করতে আপনার ই-মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড হাতানোর জন্য নতুন একটি প্রতারণার কৌশল (স্ক্যাম) নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরিচিত বন্ধু বা আত্মীয়ের ছদ্মবেশে বার্তা পাঠিয়ে একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হচ্ছে। ওই লিংকে ক্লিক করা হলে একটি নতুন পেজ খুলে যাচ্ছে। যেখানে ই-মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড চাওয়া হচ্ছে। এটাকে বলা হচ্ছে যে পাসওয়ার্ড সংগ্রহের জন্য একধরনের ‘ফিশিং’ কৌশল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন দুর্বৃত্তদের পাঠানো ভুয়া লিংকে ক্লিক করা হচ্ছে, তখন ফেসবুকে ‘রি-লগইন’ চাওয়া হচ্ছে। সেখানে ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হলে তা দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে দুর্বৃত্তরা।
সাধারণত ফেসবুকের মেসেঞ্জার ইনবক্সে ‘ইজ দিস ইউ?’ বলে বার্তাটি আসছে। কিছুদিন ধরে এ ধরনের বার্তা ছড়াচ্ছে বেশি। এ ধরনের বার্তা সাধারণত ফেসবুক ক্লোনিং বা ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে পাঠাতে পারে দুর্বৃত্তরা। এ রকম ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। ফেসবুক ক্লোনিং কঠিন কিছু নয়। দুর্বৃত্তরা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহারকারীর অনুরূপ আরেকটি অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে ব্যবহারকারীর তথ্যসহ সবকিছু নকল করে বসিয়ে দিতে পারে। এরপর ওই ক্লোন অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যবহারকারীর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের বোকা বানাতে পারে। ব্যবহারকারীর অজান্তেই অন্য অ্যাকাউন্ট থেকেও তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে দুর্বৃত্তরা।
শিক্ষকদের মান অপমান
শিক্ষকদের মান অপমান
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১.
এই
দেশের শিক্ষকদের জন্য এখন খুবই খারাপ একটা সময় যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ কিংবা
বিশ্ববিদ্যালয় সবাই এখন কোনো না কোনো আন্দোলনে আছেন। যেহেতু আন্দোলন শব্দটা
এখন মোটামুটি একটা অশালীন শব্দ তাই দেশের প্রায় সব শিক্ষক দেশের সব
মানুষের কাছে এখন একটা রীতিমতো অপরাধী গোষ্ঠী। শিক্ষকদের জন্য যেহেতু এই
দেশে কোনো সম্মানবোধ নেই তাই কেন তারা আন্দোলন করছে সেটি কেউ খুঁচিয়ে
দেখেছে কিনা সেটা নিয়েও আমাদের সন্দেহ আছে। ছাত্রলীগের কর্মী এখন অবলীলায়
তাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পারে, একজন সাংসদ প্রকাশ্যে চাবুক মারার
ঘোষণা দিতে পারেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে খোঁটা
দিতে পারেন, কেউ কিছু মনে করেন না। আমাদের দেশের কিছু পত্র পত্রিকা
বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পুরো বিষয়টি
এক ধরনের আমোদ বলে মনে হতে পারে।
আমি
একজন শিক্ষক তাই খুবই সঙ্কোচের সঙ্গে শিক্ষকদের জীবন নিয়ে দুটি কথা বলতে
বসেছি। শিক্ষকরাও যে মনুষ্য জাতীয় প্রাণ, তাদেরও যে ক্ষুধা-তৃষ্ণা থাকতে
পারে এবং তারাও যে দেশের মানুষের কাছে একটুখানি সম্মান চাইতে পারেন বিষয়টি
জেনে কেউ যদি অবাক হয়ে যান তাহলে তার জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমি
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কিন্তু যখনই কোনো শিক্ষক নিয়ে কথা বলতে যাই
তখনই কেন জানি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে। দেশের মানুষ কি
জানে এই দেশে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা হচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী?
নতুন বেতন কাঠামোতে তারা কোথায় গিয়ে ঠেকেছেন খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম
কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমি
এরকম একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে চিনি যিনি তার স্কুলে
পৌঁছে প্রথমেই একটা ঝাড়ু এবং এক বালতি পানি নিয়ে স্কুলের টয়লেটে ঢুকে সেটা
পরিস্কার করতেন। আমি যতদূর জানি এখন স্কুলে স্কুলে একজন করে কর্মচারী দেওয়া
হয়েছে। আগে স্কুল চালাতেন শুধু শিক্ষকেরা, টয়লেট পরিস্কার থেকে স্কুলের
ঘণ্টা বাজানো সবকিছুই করতে হতো শিক্ষকদের। স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম,
ক্লাসরুমও কম। দুই ব্যাচে পড়াতে হয় তাই সেই কাকভোর থেকে একেবারে বেলা পড়ে
না যাওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো অবসর নেই। তারা যদি ক্লাসে পড়াতে পারেন, তাহলে
নিজেদের রীতিমতো সৌভাগ্যবান মনে করেন, কারণ বেশিরভাগ সময়েই তারা ক্লাশে
পড়ানোর সুযোগ পান না। এই দেশের যত ‘ফালতু’ কাজ সবকিছু এই শিক্ষকদের দিয়ে
করিয়ে নেওয়া হয়। গ্রামের স্যানিটারি ল্যাট্রিন গোনা থেকে শুরু করে ভোটার
তালিকা তৈরি করা-এমন কোনো কাজ নেই যা তাদের করতে হয় না।
এই
দেশে সম্ভবত প্রায় আশি হাজার প্রাইমারি স্কুল আছে- এই স্কুলের শিক্ষকদের
থেকে অসহায় কোনো গোষ্ঠী এই দেশে আছেন বলে আমার জানা নেই। তাই আমি যখনই
শিক্ষকদের নিয়ে কিছু বলতে চাই তখনই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের কথা
একটিবার হলেও স্মরণ করে নেই।
২.
আমার
ধারণা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর গত কয়েকদিন থেকে খুব মন
খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের মর্যাদার জন্য আন্দোলন করছেন,
আন্দোলনটি যেহেতু শুরু হয়েছে বেতনের স্কেল ঘোষণার পর তাই সবারই ধারণা
আন্দোলনটি বুঝি টাকা পয়সার জন্য! আমি জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাকা
পয়সা খুব বেশি নেই (আমার মনে আছে একজন লেকচারারের বেতন কত সেটি উল্লেখ করে
একবার খবরের কাগজে একটি লেখা ছাপানোর পর আমার একজন তরুণ সহকর্মীর বিয়ে ভেঙে
গিয়েছিলো!)।
সত্য
মিথ্যা জানি না, শুনেছি আমরা মাসে যত টাকা বেতন পাই একজন সচিব তার গাড়ির
তেলের জন্য তার থেকে বেশি টাকা পান! বেতনের বাইরে একজন শিক্ষক কী পরিমাণ
সুযোগ পান সেটা লিখলে আমার আরো তরুণ সহকর্মীর বিয়ে ভেঙে যেতে পারে। তবে
একবার একজন সচিবের গাড়িতে ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।
সচিব মহোদয় যেন দ্রুত নিরাপদে যেতে পারেন সেজন্য যে প্রক্রিয়ায় ট্রাফিক
থামিয়ে তাকে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিলো সেটি চমকপ্রদ! এই ব্যাপারগুলো
নিয়ে আমার এক ধরনের বিস্ময় আছে কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালযের
শিক্ষকদের কয়েকদিন থেকে মন খারাপ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষকদের
নিয়ে কিছু খোলামেলা কথার কারণে। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি ‘কানাকে কানা
বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’, সেই হিসেবে এই কথাটিও নিশ্চয়ই সত্যি যারা
টাকা পয়সা নিয়ে এক ধরণের টানাটানির মাঝে থাকেন তাদেরকে টাকা পয়সা নিয়ে
খোঁটা দিলে তারা কানা এবং খোঁড়ার মতই অপমানিত বোধ করেন।
এই
দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে আমরা এখন মোটামুটিভাবে অনুমান
করতে পারি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন কত হওয়া উচিৎ! গত সেমিস্টারে
আমাকে পাঁচটি কোর্স নিতে হয়েছে (না, এটি মুদ্রণ প্রমাদ নয়, সংখ্যাটি সঠিক,
পাঁচ), আমার পরিচিত একজন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে মাত্র একটি কোর্স
নেয়ার জন্যে প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে বেশি টাকা পান! কাজেই কোন কাজের
জন্যে কতো টাকা বেতন হওয়া উচিৎ সেটি কখনোই সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না,
আমি শুধুমাত্র বিনয় সহকারে সবাইকে বলার চেষ্টা করতে পারি আমাদের যত টাকা
বেতন দেয়া হয় আমরা সেই বেতন পাবার যোগ্য নই- আমাদের আরো কম টাকা বেতন দিয়ে
আমাদের একটা শিক্ষা দেয়া উচিৎ ছিল কথাটি আমাদের জন্যে সম্মানযোগ্য নয়।
নতুন
বেতন স্কেল দেবার পর সাংবাদিকেরা মাঝে মাঝেই এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য
জানতে চেয়েছে, আমাকে বাধ্য হয়ে তখন বেতন স্কেলটি খুঁজে বের করে সেটি দেখতে
হয়েছে। বেতনের টাকার পরিমাণ নয় বিভিন্ন পদের মানুষ কে কোথায় অবস্থান করছেন
সেটি দেখে আমি আঁতকে উঠেছি।‘পদমর্যাদা’ বলে একটি বিচিত্র শব্দ আছে।
বাংলাদেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একজন
সচিব আছেন। কোনো একটি সভায় কোনো একটি বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্যে তিনি আমাকে
বলেছিলেন, ধর্ষিত হতে যাচ্ছে এরকম একটি মেয়ে যদি আবিষ্কার করে তার বাঁচার
কোনো উপায় নেই তাহলে তার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ধর্ষণটি উপভোগ করার
চেষ্টা করা। (এটি এই সচিবের নিজের উক্তি নয়, ক্লেটন উইলিয়াম নামে একজন
আমেরিকান রাজনীতিবিদের উক্তি)। পদমর্যাদায় এই সচিব নিশ্চয়ই প্রফেসরদের থেকে
উপরে, কাজেই আমি জানার চেষ্টা করছি কোনো একটি সভায় যদি এই সচিব এসে
উপস্থিত হন তাহলে কি আমাকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে একটা স্যালুট দিতে হবে? এই
দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে আমার নাম আছে, এতোদিন এই দেশের কালচারে
একে অন্যকে সম্মান দেখানোর যে বিষয়টি আছে আমি সেভাবেই চালিয়ে এসেছি।
পদমর্যাদা’
নামে এই বিষয়টি আবিষ্কার করার পর এখন আমি খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। তাহলে কি
সভায় একজন একজন করে ঢোকার পর আমাকে কি কখনো কখনো উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট করতে
হবে? বিষয়টি কে আমাকে বুঝিয়ে দেবে? এই ধরণের সকল সভা থেকে একশ হাত দূরে
থাকা সম্ভবত আমাদের জন্যে একমাত্র সম্মানজনক সমাধান।
আমি
যদি ঠিকভাবে বুঝে থাকি, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই আন্দোলনটি
বেতনের টাকা বাড়ানোর জন্যে আন্দোলন নয়, ‘পদমর্যাদা’ নামক বিভাজন প্রক্রিয়া
থেকে উদ্ধার পাওয়ার আন্দোলন। সময়ে অসময়ে উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট দেওয়ার
বিড়ম্বনা থেকে উদ্ধার পাওয়ার আন্দোলন!
‘পদমর্যাদা’
শব্দটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা সবাই
যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে শেরপুরের সোহাগপুরে
তৈরি বিধবাপল্লীর নাম শুনেছি। বেশ কয়েক বছর আগে বেগম মতিয়া চৌধুরী আমার
সাথে যোগাযোগ করে বিধবাপল্লী এলাকায় একটা কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের
অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি দেশের বাইরে ছিলাম।
দেশে ফিরেই খুবই আনন্দের সাথে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। রওনা
দেবার পর আবিস্কার করলাম এটি অনেক বড় অনুষ্ঠান। সেখানে শুধু যে কৃষিমন্ত্রী
বেগম মতিয়া চৌধুরী আছেন তা নয়, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদও আছেন।
এতো গুরুত্বপূর্ণ দুজন মন্ত্রী এক সাথে, বলা যেতে পারে সেই এলাকায় রীতিমত
আলোড়ন তৈরি হয়ে গেল। কোনো একটা অনুষ্ঠানে সবাই মিলে স্টেজে উঠবে, এই বড় বড়
দুজন মন্ত্রীর সাথে আমিও আছি। স্থানীয় নেতাকর্মীর ভীড়, নিরাপত্তার দায়িত্বে
থাকা পুলিশ সবকিছু মিলিয়ে আমি একটু জবুথবু অবস্থায় পড়ে গেলাম।
হঠাৎ
শুনতে পেলাম মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত সবাইকে বিশাল
একটা ধমক দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বলরেন, ‘এই যে, ইনি একজন শিক্ষক। উনাকে সবার
আগে যেতে দাও। আমরা সবাই তার পিছনে যাব।’
অবিশ্বাস্য
ব্যাপার, আমাকে সবার সামনে নিয়ে আসা হল। আমি বিব্রতভাবে হেঁটে যাচ্ছি, দুই
দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আমার পিছনে পিছনে হেঁটে যাচ্ছেন। সারা জীবনই
ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সম্মান এবং ভালোবাসা পেয়ে আসছি কিন্তু দুইজন এতো
বড় বড় মন্ত্রী একজন শিক্ষককে এভাবে সম্মান দেখাবেন সেটি আমি কল্পনা করিনি।
শিক্ষকদের কতো জায়গায় কতোভাবে অসম্মান করা হয়েছে, কিন্তু এই ঘটনাটির কথা
মনে করে জীবনের অনেক দুঃখ এবং ক্ষোভের কথা আমি ভুলে যেতে পারি।
৩.
শিক্ষকদের
বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে এই অভিযোগগুলোর
বেশিরভাগই সত্যি। তারপরও একটু দুঃখ হয় যখন দেখি কিছু শিক্ষকের জন্যে
ঢালাওভাবে সকল শিক্ষককে অবমাননা সইতে হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা
নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের
পড়িয়ে টাকা উপার্জন করতে ব্যস্ত থাকেন, এই অভিযোগটি প্রায় সবসময়ই শোনা যায়।
কিন্তু কেউ কখনো একটা বিষয় লক্ষ্য করেন না, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য
বিভাগ রয়েছে, তার মাঝে শুধুমাত্র হাতে গোনা দুই একটি বিভাগের শিক্ষকেরা
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়াতে পারেন। এই দেশের প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আছেই মাত্র অল্প কয়েকটি বিভাগ, অথচ অপবাদটি ঢালাওভাবে
সব বিভাগের সব শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়।
আমি
মোটেও অস্বীকার করবো না, বিশ্ববিদ্যালযের অনেক শিক্ষকেরই অনেক বড় ধরণের
সমস্যা আছে। কিন্তু তারপরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে এই দেশের অনেক
বড় সম্পদ। একটা সময় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে
থাকতো, কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎ
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলা হয়। আমি
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থানীয় রাজনৈতিক দল
নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে তখন তার মৃত্যুঘণ্টা বেজে যায়। একটা
বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে অনেকদিন লাগে। কিন্তু সেটাকে ধ্বংস করতে খুব
বেশি সময় লাগে না।
শুরুতেই
বলেছি শিক্ষকদের এখন খুব খারাপ একটা সময় যাচ্ছে! অথচ এরকমটি হওয়ার কথা ছিল
না। এই দেশের প্রায় চারকোটি ছাত্রছাত্রী, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মোট
জনসংখ্যাই হচ্ছে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ লাখ। যদি আমাদের সব ছাত্রছাত্রীকে ঠিক করে
লেখাপড়া করানো যেতো তাহলে দেশটা চোখের সামনে একটা স্বপ্নের দেশ হয়ে যেতো!
লেখাপড়া করানোর জন্যে জিডিপির ছয় শতাংশ খরচ করার কথা, অথচ সেই অংশটুকু কমতে
কমতে দুই শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। যদি সত্যি সত্যি এই দেশের সব
ছেলেমেয়েকে ঠিকভাবে লেখাপড়া করানো হতো তাহলে সবচেয়ে আনন্দে কে থাকতো? এই
দেশের শিক্ষকেরা।
আমাদের
শিক্ষকদের যথেষ্ট অসম্মান করা হয়েছে, শুধু তাই না শিক্ষক এবং আমলাদের
একেবারে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দেশের একজন শিক্ষক হিসেবে
আমাদের মন খারাপ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
কিন্তু
যখন এক টুকরো চক হাতে নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আমি
ছাত্রছাত্রীদের মুখের দিকে তাকাই তখন আমার সমস্ত মন খারাপ দূর হয়ে যায়। যখন
ছাত্রছাত্রীরা এসে বলে তাদের তৈরি রকেট সারা দেশে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে
তখন আনন্দে আমার বুকটি ভরে যায়। যখন দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টেলিফোন
করে আমাদের ছাত্রদের তৈরি ড্রোনটি দেশের সত্যিকার কাজে ব্যবহার করার জন্যে
আগ্রহ দেখায় তখন আমার বুকটি একশ' হাত ফুলে যায়। যখন প্রোগ্রামিং
প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা সারা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ফিরে আসে আমার মনে
হয় এই পৃথিবীতে আমার চাইতে সুখী কে আছে? যখন কয়েকশ ছেলেমেয়ে এসে বলে তাদের
গবেষণা পেপার জার্নালে ছাপার জন্যে মনোনীত হয়েছে তখন আমার মনে হয় বেঁচে
থাকার মতো এতো আনন্দ আর কোথায় আছে?
চারপাশে
সবাই মিলে আমাদের মন খারাপ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা শিক্ষক,
যতদিন আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সাথে আছে, কার সাধ্যি আছে আমাদের মন
খারাপ করিয়ে দেবে?
February 6, 2017
February 4, 2017
প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে বিদ্যালয় ভিত্তিক স্টুডেন্ট কাউনসিল গঠন-২০১৭
উপরের গুলো স্পষ্ট দেখা না গেলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে বিদ্যালয় ভিত্তিক স্টুডেন্ট কাউনসিল গঠন-২০১৭ দেখতে বা ডাউনলোড করতে ক্লিক এখানে
February 3, 2017
February 2, 2017
Subscribe to:
Posts (Atom)