ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসকদের মধ্যে হিটলারের নাম বলে থাকেন অনেকে। শৈশবের নিপীড়ন ও শোষণের প্রতিশোধ নিতে ধীরে ধীরে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন হিটলার, জানান আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ও হার্ভার্ডের প্রফেসর হেনরি মুরে। ১৯৪৩ সালে ইউএস অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস এবং সিআইএ-এর প্রসিকিউটর অ্যাডলফ হিটলারের ব্যক্তিত্ব নিয়ে গবেষণার ভার দেন মুরের কাঁধে। মনোবিজ্ঞানী হিটলার সম্পর্কে ২২৯ পাতার রিপোর্ট দাখিল করেন। সেখানে উঠে এসেছে হিটলার সম্পর্কে অদ্ভুত কিছু তথ্য।
শৈশবে হাতাশাগ্রস্ত ছিলেন হিটলার
১. শৈশবে হাতাশাগ্রস্ত ছিলেন হিটলার। জীবনের সবখানেই তিনি শোষণ আর নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। এ ছাড়া ছোটখাটো দেহের অধিকারী হওয়ায় তিনি অন্য শিশুদের কাছে অবহেলার পাত্র ছিলেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে হওয়ায় স্কুলে ভর্তি করতেও চায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তিনি খেলাধুলাতে পারদর্শী ছিলেন না। অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীতেও তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। তাই পাশবিক শক্তি, দৈহিক বল, নিষ্ঠুর নিয়ন্ত্রণ এবং সেনাশক্তিকে হিটলার তার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার উপায় বলে ধরে নিয়েছিলেন।
অডিপিয়াস কমপ্লেক্সে ভুগছিলেন তিনি
২. অডিপিয়াস কমপ্লেক্সে ভুগছিলেন তিনি। মায়ের ভালোবাসা এবং বাবার প্রতি ঘৃণা থেকে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। ছোটকালে হঠাৎ করেই তিনি বাবা-মাকে সেক্স করতে দেখে ফেলেন। তখন থেকেই এমনটা হয়েছিল বলে জানান মুরে। বাবার প্রতি বেশ অনুরক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু এমন ঘটনায় আকস্মিকভাবে বাবার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন হিটলার। তখন থেকে বাবাকেই শত্রু মনে করতেন এবং বাবার মৃত্যুর পর আর কোনো শত্রুর দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি।
হিটলারের যৌন দুর্বলতা ছিল
৩. হিটলারের যৌন দুর্বলতা ছিল বলে তারই পুরনো যৌনসঙ্গিনী জানিয়েছিলেন। এই আক্ষেপ থেকে পরিত্রাণ পেতেও তার মধ্যে এক ধরনের আগ্রাসী মনোভাব গড়ে ওঠে। নারীর সামনে পুরুষের সক্ষমতা প্রকাশ না করতে পেতে অন্যান্য পুরুষের সামনে নিজের ক্ষমতা প্রকাশের এক ধরনের বিকৃত মানসিকতা গড়ে ওঠে তার। তবে হিটলারের একাধিক যৌনসঙ্গিনী ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেছিলেন। বলা হয়, যুদ্ধের শেষকালে বার্লিনের বাঙ্কারে দুজন আত্মহত্যা করেন।
ক্ষমতার চূড়ায় তিনি
৪. ক্ষমতার চূড়ায় তিনি। তারপরও পরিস্থিতির চাপে তিনি প্রায়ই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেন। রাতের দুঃস্বপ্নে প্রায়ই অস্থির থাকতেন তিনি। আবার ক্রোধ, আত্মবিশ্বাস এবং যে ক্ষমতা নিজেকে ঘিরে থাকতো তাদের নিয়েও চাপ অনুভব করতেন। অনিয়ন্ত্রিত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতো অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, লাগামহীন ক্রোধ এবং এর সমাপ্তি ঘটতো অশ্রু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এ ধরনের পরিস্থিতির পর তিনি প্রায়ই নির্জীব, অবসাদগ্রস্ত এবং সংশয়বাদী হয়ে উঠতেন। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়তো রাতের ঘুমে। তখন সবকিছু দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিতো। তারপর আবারো তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আরো নৃশংসতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
জার্মান রক্তের প্রতি শ্রদ্ধবোধ ছিল তার
৫. খাঁটি, অমিশ্রিত এবং নিরেট জার্মান রক্তের প্রতি শ্রদ্ধবোধ ছিল তার। নিজের মিশ্র উত্তরাধিকার নিয়ে তাই ক্ষোভ ছিল তার। বারো বছর বয়সে ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে যৌনতাপূর্ণ কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়েন হিটলার। এর পর থেকেই তার সাইফিলোফোবিয়া দেখা দেয়। নারীর সঙ্গে রক্তের মাধ্যমে বাজে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটা চরম ভয় ঢুকে যায় মনে। এরপর থেকেই তার যৌন উত্তেজনার ওপর প্রভাবশালী হয় ওঠে মন।
হিটলারের এক জাদুকরী ব্যক্তিত্ব ছিল
৬. হিটলারের এক জাদুকরী ব্যক্তিত্ব ছিল। জার্মানে মানুষের সামনে বক্তব্য দিতে উঠলে সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকতেন। অথচ ছোট দেহে নরম হাতে তিনি হ্যান্ডশেখ করতেন। তার সবকিছু অন্যের চোখে ছিল ইন্দ্রজাল। ধূসর-নীল চোখ নিয়ে ক্রমাগত প্রশাংসা পেতেন হিটলার। কিন্তু মুরের বর্ণনায় ওগুলো ছিল মৃত, নিরপেক্ষ এবং অদেখা কোনো ভুবনের মতো। তার উচ্চতা জার্মানিদের গড়পড়তা উচ্চতার চেয়ে কিছুটা কম ছিল। চুল অনেক কম এবং পাতলা ঠোঁটের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু তার হাত দুটো ছিল সুন্দর গড়নের। বিভিন্ন সূত্র জানায়, কারো সঙ্গে পরিচিত বা মিলিত হওয়ার সময় হিটলার বেশ লাজুক অথবা মেজাজী থাকতেন। খাবারের বিষয়ে ছিলেন দেখার মতো খুঁতখুঁতে।
No comments:
Post a Comment